না, আমি এখন সেক্সচেঞ্জ সার্জারির কথা ভাবিনা। আমাকে সার্জিক্যাল ছুরি দিয়ে কেটে ফেললেও আমি আমার এই গোপন কথা কাউকে বলতে পারবোনা। আমি জানি যে শরীর বদলানো সম্ভব হলে, আমি সত্যি করে একজন ছেলে হলে ভীষণ ভীষণ প্রেমিক, ভীষণ রোম্যান্টিক, ভীষণ সুখী একজন হতাম। কিন্তু, আমি কাউকে একথা জানাতে পারবোনা। হয়তো আমার মধ্যে বোল্ডনেসের অভাব আছে। ... ...
তবুও শেষপর্যন্ত আমি এইটুকু বুঝেছি যে এই মিছিল অন্তত আমার নিজের মনের মধ্যে থেকে অনেক দ্বিধাকে দূর করেছে, এল জি বি টি সমাজের অন্যান্য অংশকে স্বীকার করার, শ্রদ্ধা করার সাহস এনে দিয়েছে। ... ...
মনো¢বজ্ঞানের ভাষায়, রূপান্তর কামনা এক¢ট অসুখ যাতে ¢কছ¥ মানুষ তাঁদের জন্মলব্ধ °দ¢হক নারীতÆ বা পুরুষতেÆর স® মান¢সক একাত্মতা অনুভব করেন না। ... ...
আগে আমি নিজের মধ্যে এই একটা সমকামী সত্ত্বা আছে এটা ভাবলে খুব অস্বস্তি বোধ করতাম, এমনকী চেপেও রাখতে চাইতাম, বা পারলে কোনভাবে এটা পাল্টে ফেলতে চাইতাম। আবার সমকামিতা নিয়ে কোন কথা উঠলেও আমার শুনতে খুব অস্বস্তি লাগত। ... ...
পৃথিবীতে এক একজন মানুষ থাকেন যাঁদের অতি দূরত্বেও থাকেনা কোনো পরিত্রাণকারী। সময়ের উপর্যুপরি প্রহারে যখন পিঠ ঠেকে যায় অন্তিম দেওয়ালে, তখন স্রেফ অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই তাকে তার মত করে ফুঁসে উঠতে হয়। বিস্ফোরণের মত ফেটে পড়তে হয় প্রহারকের ওপর। সে প্রহারক ব্যক্তিবিশেষই হোক বা সমাজ! ... ...
যত টাকা থাকলে সরকারী হাসপাতালে হেনস্থা হবার বিপর্যয় (বোধহয় শব্দটির ভুল প্রয়োগ হলো, কারণ এটাই সত্যি যে হেনস্থা হওয়াটাই সেখানে ঘটনা, "দুর্ঘটনা' নয়) আমাদের ঘাড়ে নিতে হত না, ততটা আর্থিক স্বচ্ছলতা আমাদের ছিলনা। ... ...
অনেক ভেবেও অঙ্কটা মেলাতে পারেনা ও। ছোট থেকেই আর পাঁচটা ছেলের থেকে ও একটু আলাদা। সবাই যখন খেলার মাঠে দাপিয়ে বেড়াত, ও তখন ঘরে বসে ছবি আঁকত নয়ত গান শুনত। ঠাম্মা বলত, সমু আমাদের লক্ষ্মী ছেলে ... ...
২০০১ সালে যখন প্রথম queer rights নিয়ে সক্রিয় হই, তখন আমি ১২ ক্লাসের ছাত্র। সবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েছি। তারপর ২০০৩-০৪ সালে প্রথম ডকুমেন্টারি ছবি “পিকু ভাল আছে”। শহরের কাগজে কাগজে রিভিউ আর কলেজ, ঘর, পাড়ার কোণায় কোণায় উৎসহিষ্ণু, অবাক, বিদ্রূপাত্মক চোখ – ছেলেটা কী বলে রে বাবা! এমনকি শহরের closeted গে, লেসবিয়ান, বাইসেক্সুয়াল মানুষেরাও internalised phobia থেকে থু থু করে উঠল – “দিব্বি ছিলাম বাপু, ৩৭৭ ধারা থেকে বেঁচে, ক্যাসুয়াল ডেট করে। দিল সব ফাঁস করে”। ... ...
আমার দুটো ঘর। একটাতে আমরা কয়েকজন মিলে থাকি, অন্যটায় পৌঁছতে হয় একা একা। যে ঘরটায় অনেকে মিলে থাকি, সেখান থেকে বার হয়ে অন্য ঘরে পৌঁছতে হলে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়... ... ...
জানতাম না LGBT+ কাকে বলে। শুধু জানতাম একটি শব্দ ‘Gay’ আর এটাও জানতাম যে আমাকে সবসময় প্রমাণ করতে হবে যে আমি কোনো অবস্থাতেই Gay নই ... “এই বেটা, বেটিন্তর মতো হাটস কিতা, বুক ফুলাইয়া হাট” (মেয়েদের মতো হাঁটছিস কেন, বুক ফুলিয়ে হাঁট), বাবার এই কথাগুলো এখনো মাঝে মাঝে কানে বাজে। বা বোনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটু রূপচর্চা করলে বাবা যখন বলতেন, “দুনিয়ার যত বেটিয়ামী কাম তোর” (পৃথিবীর সব মেয়েলোকের কাজ তোকে করতেই হয়) তখন মনের অজান্তেই একটা প্রশ্ন জাগত, কেন আমি এমন। কেন আমি এত হাত নাড়িয়ে কথা বলি, কেন আমার ছেলেদের শরীরের কাছঘেঁষা হয়ে থাকতে ভাল লাগে, কেন আমি ছেলেদের মত হাঁটতে পারি না। ... ...
ঠাকুমার মতন আরও শত শত স্পর্শে গায়ে কাঁটা দিল রথের, রথের রশির। তাতেই নড়েচড়ে চলতে শুরু করলেন তালধ্বজ, দেবদলন এবং নন্দীঘোষ। রথ, পথ আর মূর্তি অন্তর্যাপন করলেন আমার, তোমার এবং সকলের। ঐশ্বরিক হয়ে উঠল গায়ে লেগে থাকা সময়টুকু। জনজোয়ারের প্রবল উচ্ছাসে ঢেকে গেল জন্মমৃত্যু। তাদের গায়ে তখন সূর্যের মতন তেজ। প্রবল বৃষ্টি তাঁর কাছে এসে ইলশেগুঁড়ি হয়ে যায়। আল্পনা এঁকে যায় রশির গায়ে সাতরঙা রোদ। রামধনু হয়ে ওঠে জনজোয়ার, আনন্দতরঙ্গ তোলে আমাদের বুক ছাপিয়ে। লক্ষ লক্ষ রোদের কণা, বৃষ্টির ছাঁট আর প্রজন্মব্যাপী আনন্দস্পর্শ রামধনুর ভার বয়ে নিয়ে চলে। তাঁকে টানতে হয় না আলাদা করে। কেবল ছুঁয়ে পথ চলতে হয়। ... ...
আগে ভাবতাম আমার সুশিক্ষিত বাবা আমার সমকামিতা মেনে নেবে। কিন্তু আমার আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মা কে বোঝতে বেগ পেতে হবে। কিন্ত আসল ঘটনাটি একদম বিপরীত। স্কুলে থাকাকালীনই সমকামিতা আমাদের সমাজে স্বীকৃত নয় একটা পারিবারিক আলোচনাতে বাবা বলেছিল। আমার সিরিয়াল-প্রিয় মা তত দিন 'দোস্তানা', 'মেমরিস ইন মার্চ', দেখে ফেলেছে। আর তখন একটি হিন্দি জনপ্রিয় সিরিয়ালে (মর্যাদা/মরয়াদা, ইন্দ্রানী হালদার ছিলেন) অন্যতম প্রধান চরিত্র ছিল সমকামী। এবং মায়ের চরিত্রটির জন্য বেশ সহানুভূতি ছিল। সে দিনই বুঝেছিলাম মা তার সন্তানকেও বুঝবে। হ্যাঁ মা বুঝেছে। ... ...
এ লেখা তোমার কাছে যাবে, তুমি পড়বে, এ ভ্রমে আমি নেই। তবু যদি এই উড়োচিঠি হাজির হয় তোমার কাছে কোনোদিন, কোনোভাবে – নিজে থেকে শুধু মেসেজ কোরো ‘পড়েছি’। আমি তার পরিপ্রেক্ষিতে তোমায় কোনো কথা জিজ্ঞাসা করে বিব্রত করব না। অর্ক, ভালবাসা তো প্রকাশ পেতে চায়। পৌঁছাতে চায় গন্তব্যে। অনেকের ভালবাসা সে পথে হাঁটা শুরুই করে না। আমাদের করেছিল। আমি বিশ্বাস করি করেছিল। কিন্তু মাঝপথে যেই হারিয়ে ফেলার কষ্ট তো যাওয়ার নয়। তবু তুমি ‘পড়েছি!’ জানালে, জানব, একসাথে না হোক, আমরা কোনো একভাবে গন্তব্যে পৌঁছলাম। ... ...
তোমার জন্য কিছুই করা হল না বাবা, কিছু কিনে দেওয়া হল না তোমায়। যে রাতে হঠাৎ তোমাদের সামনে নিজের সত্ত্বার কথা বললাম, তারপর মনে পড়ে না আর কতটুকু কী কথা হয়েছিল তোমার সাথে। পরে, মায়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম, তুমি নাকি খুব কেঁদেছিলে! আজ তুমি থাকলে তোমাকে আর মাকে সামনে বসিয়ে আরও একবার বোঝাতাম। তুমি বুঝতে তো, বাবা! ... ...
দুটো নাও ধীরে ধীরে ঢুকছে নদী থেকে সোতা খাল দিয়ে। একটার খোল জুড়ে আমড়া। আরেকটার বুকজুড়ে নারিকেল। ঘাটকুলের কাছ দিয়ে যেতে যেতে জলে ঢেউ ওঠে না। মেয়েটি হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে ভাটা মাছ তোলে। কাকিলা মাছ ঘোরে ফেরে। বড়শি ফেলে মেয়েটি গাইতে থাকে- দিয়া মোরে ফাঁকি রে আমার সোনার ময়না পাখি। বাতাস প্রবল হলে সুরটা বহুদূরে উড়ে যায়। সেহাঙ্গলের ঠোঁটায় এসে সুড় সুড় করে। কড়াইগাছে একটি তক্ষক অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। আর বাতাস মন্দ স্পষ্ট শোনা যায়- সোনার ময়না পাখিটি উড়ে যায়। ডানার শব্দ। আর কান্নার পুরণো কম্পন। বুঝতে হলে কান থাকা দরকার। ... ...
আমি তখন যুদ্ধক্ষেত্রে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। পায়ের একদিক থেকে রক্ত ঝরে যাচ্ছে তখনো, তবে বেশ কমে এসেছে। বাঁধন দিয়েই আটকেছিলাম। চারপাশে শুধু মানুষের স্তুপ। তার মধ্যেই আমার মত কয়েকজন ছটফট করছে। কারোর হাত, কারোর পা, কারোর মাথা চোট পেয়েছে। আর বাকি যারা পড়ে আছে, উঠছেনা, তারা সব মৃত মানুষ। মাঠটার চারপাশে কিছু গাছ ছিল। গাছগুলোতে এখন পাখির দল কিচমিচ করছে। মানে সন্ধ্যা হয়ে এল। এছাড়া সন্ধ্যা বোঝার উপায় এখনো নেই। আকাশটা লালচে হয়ে আছে। কনে দেখা আলো না কী বলে যেন! বেশ কিছু লোক হাতে গড়া মাচা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ... ...
যদিও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকরণ তার পূর্ণ রূপে এখনো বহুদূর, ছোট ছোট ধাপ নেওয়া হচ্ছে, কিছু সংলাপ শুরু হয়েছে। তবে এই সংলাপগুলোর বেশিরভাগই বৈচিত্র আর অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত নীতি বিষয়ক, নানান পরিচয়ের মান্যতা প্রদান, আর প্রান্তিক মানুষজনের প্রতি একটু আলাদা মনোযোগ যাতে তারা নানান জায়গায় চাকরি পেতে আবেদন করেন। বিশেষ করে স্টার্টআপ, নন-প্রফিট সংস্থা, ছোট ছোট ফর প্রফিট কর্মক্ষেত্রগুলো যেগুলো সামাজিক ন্যায় এবং অন্তর্ভুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ। এদের বেশিরভাগ কর্মখালির বিজ্ঞাপনগুলোয় লেখা হয় "আমরা সম-সুযোগে বিশ্বাসী চাকুরী দাতা এবং প্রান্তিক গোষ্ঠী যেমন প্রান্তিক জাতি, লিঙ্গ, যৌনতা এবং দক্ষতার মানুষদের আবেদন জানাতে উৎসাহিত করি।" কিন্তু, আমরা যখন "সমান সুযোগ"-এর কথা বলছি, আমরা কি ইক্যুইটি-র থেকে সরে যাচ্ছি? ... ...
যৌনকর্ম আর পাঁচটা পেশার মতই একটা পেশা মাত্র। কারখানার শ্রমিক গতর খাটিয়ে অর্থ উপার্জন করেন, যৌন শ্রমিকও গতর খাটিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। পিতৃতন্ত্র আমাদের শেখায় যৌনতা খারাপ, এবং নারী দেহ ভোগের বস্তু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে আর্থসামাজিক ভাবে দুর্বল মহিলাদের অসহায়তাকে হাতিয়ার করে তাঁদের কে পাচার করে নিয়ে আসা হয়, এবং যৌন দাসত্বে জোর করে ঢুকিয়ে শোষণ করা হয়। কারখানা-শ্রমিকদের যেটুকুও সামাজিক মর্যাদা আছে, সেটুকুও এনাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়। এই অবস্থার বদলের জন্যে ক্রমাগত আন্দোলন করে চলেছেন যৌনশ্রমিক মা বোনেরা। ... ...